দোয়া কবুল হওয়ার আমল। কি ভাবে দোয়া করলে দোয়া কবুল হয়?

দোয়া কবুল হওয়ার আমল


চাঁদপুরীয়ানঃ

দোয়া একটি ইবাদত। দোয়া মুমিনদের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার।  দোয়ার মাধ্যমে বন্দা আল্লাহর কাছে  নিজের জন্য কিছু চেয়ে নেয়। তবে দোয়া কবুল হওয়ার জন্য কিছু শর্ত রয়েছে। দোয়া কবুল হওয়ার আমল রয়েছে।  দোয়া কবুল হওয়ার সময় রয়েছে। যে সময় দোয়া করলে, যে আমলগুলো করে দোয়া করলে আল্লাহ দোয়া কবুল করেন। 


কেননা আল্লাহ পবিত্র আল-কুরআনে বলেন,

❝ আমাকে ডাকো আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব ❞ সুরা মুমিন আয়াত নাম্বার ৬০।


চলুন আজ জেনে নেই, দোয়া কবুল হওয়ার আমল গুলো কি? কিভাবে দোয়া করলে আল্লাহ দোয়া কবুল করেন? কোন সময় দোয়া করলে আল্লাহ বন্দাকে খালি হাতে ফিরিয়ে দেন না। 


দোয়া করার সময়ঃ


১ঃ ভোর রাতে অর্থাৎ তাহাজ্জুতের নামাজের সময় দোয়া করলে আল্লাহ খালি হাতে ফিরে দেয় না।


রাসূল (সাঃ) বলেন,❝ প্রত্যেকদিন রাতের শেষ তৃতীয়াংশে আমাদের রব সবচেয়ে নিচের আসমানে নেমে আসেন এবং বলেন কে আছে? আমাকে ডাকো ; আমি তোমাদের ডাকে সারা দিবো। কে আছো ?  আমার কাছে চাও,আমি তোমাকে দান করবো। কে আছো?  আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো; আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেব । ❞ বুখারী


২ঃ বৃষ্টির সময় দোয়া কবুল হয়।

হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেন,❝ দুই সময়ের দোয়া ফেরানো হয় না। আজানের সময়ের দোয়া আর বৃষ্টি বর্ষণের সময়ে দোয়া।❞ আবু দাউদ।


 

৩ঃ আজান ও ইকামাতের মধ্যবর্তী সময় দোয়া কবুল হয় ।

 

হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ❝ আযান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ে দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না ❞ আবু দাউদ  


 

৪ঃ কদেরর রাতে দোয়া কবুল হয়।

হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ❝ যে ব্যক্তি ঈমান এর সঙ্গে সওয়াব লাভের আশায় লাইলাতুল কদর রাত জেগে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করে  তার আগের (জীবনের) সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।❞ বুখারি



৫ঃ আরাফাতে দিন অর্থাৎ হজের দিনে দোয়া কবুল হয়।

 
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ❝ দোয়ার  মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলো আরাফাতের দিনের দোয়া। ❞ তিরমিজি


 

৬ঃ ইফতারের অর্থাৎ রোজার সময় ইফতারের আগে দোয়া করলে দোয়া কবুল হয়।

 

হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ❝ তিন ব্যক্তির দোয়া কখনো ফিরিয়ে দেওয়া হয় না যখন রোজাদার ইফতার করে ন্যায় পরায়ণ শাসক নির্যাতিত ব্যক্তির দোয়া করে। ❞ মুসনাদে আহমাদ, তিরমিজি। 


৭ঃ জিলহজ্ব মাসের প্রথম দশ দিনে দোয়া কবুল হয়।

কেননা হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিনের আমল অন্য যে কোনে দিনের আমলের চেয়ে উত্তম।’ বুখারি



দোয়া করার আগে যে আমল গুলো করে দোয়া করলে দোয়া কবুল হয়।


১ঃ দুরুদ পাঠ করে দোয়া করা। 

হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে মারফুভাবে বর্ণিত তিনি বলেন, ❝ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওপর দুরুদ পাঠ না করা পর্যন্ত প্রতিটি দোয়া লুকায়িত অবস্থায় থাকে। (বাইহাকি, জামিউস সগীর)



 ২ঃ আল্লাহর গুণবাচক নাম নিয়ে দোয়া করা। 

এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন , ❝ আল্লাহর অনেক সুন্দর সুন্দর নাম রয়েছে,  সেই নামগুলোর উসিলায় তার কাছে দোয়া করো।❞  -সূরা আরাফ: ১৮০



৩ঃ দোয়া কবুল হবে অন্ততে এমন বিশ্বাস রাখা।

হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,❝  কবুলের দৃঢ় প্রত্যয় রেখে, তোমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করবে। জেনে রেখো উদাসীন ও অমনোযোগী মনের দোয়া আল্লাহ তায়ালা কবুল করেন না। ❞ সুনানে তিরমিজি হাদিস  


৪ঃ অশ্রুসিক্ত নয়নে দোয়া করা।


আল্লাহ অশ্রুসিক্ত দোয়া করার নির্দেশ দিয়েছেন, ❝ তোমরা তোমাদের প্রভুর প্রার্থনা করো অশ্রুসিক্ত হয়ে।❞ সূরা আরাফ আয়াত ৫৫



মুমিনদের দোয়া বিফলে যায় না।

 

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ❝ কোন মুসলমান যখন কোন দোয়া করে কোন গুনাহের কাজ অথবা আত্মীয়তার বন্ধন ছেদের কথা না থাকে। নিশ্চিতই আল্লাহ তাকে তিনটি যে কোন একটি দান করেন। হয়তো তাকে তার প্রার্থিত বস্তু দুনিয়াতে দান করেন। বা হয় তো তার আখিরাতের জন্য জমা রেখে দেন। অথবা তার অনুরূপ কোনো অমঙ্গল কে দূর করে রাখেন ।  মুসনাদে আহমদ-১১১৩৩


দোয়া কবুলের আমল




Comments