বিদায় অনুষ্ঠানের বক্তব্য। স্কুল কলেজ মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের বিদায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য।

বিদায় অনুষ্ঠানের বক্তব্য। স্কুল কলেজ মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের বিদায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য।

 


[ যেহেতু আপনি বিদায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিবেন সেহেতু আপনার কথা  এমন ভাবে বলতে আপনার হৃদয়ের বিদায় অনুষ্ঠানের  বেদনা বিরাজমান। তাই খুব ইমোশনাল ভাবে। কথাগুলো বলতে হবে।  ]


১.

আসসালামু আলাইকুম , 

উপস্থিত সম্মানিত অতিথিবৃন্দ এবং আমার প্রাণ প্রিয় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। এবং যারা আজকে বিদায় অনুষ্ঠানে আমার বক্তব্য যারা শুনছেন সবাইকে আমার পক্ষ থেকে বিদায়ী শুভেচ্ছা জানাচ্ছি । 


২.

একজন মানুষ, একটি জীবন, আর একটি জীবনে শুধু মাত্র একটিই মধুময় শৈশব। আমার সেই রঙিন শৈশব আমি কাটিয়েছি এই স্কুলের আঙ্গিনায়। 


সকাল বেলায় ঘুম থেকে উঠে চলে আসতাম এই স্কুলে। আবার গোধুলি লগ্নে ফিরে যেতাম আপন গৃহে। 

আমার শৈশবের সব কাজ ছিলো এই স্কুলকে ঘিরে। 


কোথায়ও বেড়াতে যে পারতাম না। স্কুল খোলা তাই। কোথাও যেতে হলে কেলেন্ডারের পাতায় আগে স্কুল বন্ধের তারিখ খোঁজতে হতো। অর্থাৎ আমার মধুমাখা শৈশব জীবনের সব কিছুই ছিলো স্কুলকে ঘিরে। সব চিন্তা সব পরিকল্পনা ছিলো স্কুলের ছুটি কিংবা ক্লাসকে ঘিরে। 


এত ভালোবাসা, মায় মমতায় জড়ানো স্কুল আমার। 

অথচ আজ সেই স্কুল থেকে আমাকে বিদায় নিতে হচ্ছে। যে স্কুলে এতগুলো বছর কাটিয়েছি। এত স্মৃতি হৃদয়ের খাতায় জমা করেছি। মনভোলানো কত আদর স্নহ মায়া মততা যে স্কুল থেকে পেয়েছি। 


আজ সেই স্কুল থেকে আমাকে বিদায় নিতে হচ্ছে। 


আমি হয় তো আমার স্কুল (নিজের স্কুল বা কলেজ বা মাদ্রাসার নাম)  এটু বেশিই ভালোবাসি৷ না, না, এটু বেশি না ।  অনেক অনেক বেশি ভালোবাসি। তাই তো এই স্কুল থেকে বিদায়। এই শব্দটা আমাকে ভীষণ যন্ত্রণা দিচ্ছে। 


কারন আমার সবাই জানি, বিদায় তিনটি অক্ষরের ছোট্ট একটি শব্দ-। মাত্র তিন অক্ষর। কিন্তু শব্দটির আপাদমস্তক বিষাদে ভরা। শব্দটা কানে আসতেই মনটা কেন যেন বিষণ্ণ হয়ে ওঠে। এমন কেন হয়? 


কারণ সম্ভবত, বিদায় হচ্ছে বিচ্ছেদ। আর প্রত্যেক বিচ্ছেদের মাঝেই নিহিত থাকে নীল কষ্ট। যদিও বিদায় জীবনে শুধু একবারই নয়, এক জীবনে মানুষকে সম্মুখীন হতে হয় একাধিক বিদায়ের। সে-ই যে জন্ম লগ্ন থেকে বিদায়ের সূচনা, তারপর জীবন পথের বাঁকে বাঁকে আরো কত বিদায় যে অনিবার্য হয়ে আসে…। তার হিসেব থাকে না।

 

তবে প্রতিটি বিদায়ের পেছনে থাকে কত-শত স্মৃতি, আনন্দ, বেদনার এবং তিক্ততার গল্প। যেখানে আরও যোগ হয় জীবনের সুখ- দুঃখের হিসাব না মেলানোর হাজারো গল্প।


তাই তো বিদায় সবসময়ই বিষাদময়। আর সে বিদায় যদি পাঁচ, ছয়,সাত বছরের ভালবাসার প্রিয় মানুষগুলোকে এবং প্রিয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে জানাতে হয়, তখন বিষাদটা আবেগী রুপ নেয়। 


আমার এই শিক্ষা জীবনে মনের অজান্তেই অসংখ্য স্মৃতির মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেলা আর বন্ধুদের ফেলে যাওয়ার অনুভূতি নিশ্চয়ই দু’একটি কথায় প্রকাশ করা কঠিনতম কাজ। যা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। প্রিয় প্রতিষ্ঠানের বন্ধুদের সাথে কাটানো আড্ডা, ঘোরাঘুরি, খোসগল্প আরো কতশত স্মৃতি যে নিজের অজান্তেই মনে করিয়ে দিয়ে যায়! এই বিদায় বেলা।

তবে বিদায়ের ভাবনাটা যত নিষ্ঠুরই মনে হোক এটাই চির বাস্তবতা!! এটাই সত্য!! এটাই নিয়ম!! তাই জগতের নিয়ম মেনেই মনের বিরুদ্ধে গিয়ে। আজ নিচ্ছি বিদায়৷ 


৩.


বিদায়ের এই লগ্নে আমি আমাদের গুরুজন, আমাদের প্রিয় শিক্ষকদের,  আমাদের অভিবাকদের কাছে বিশেষ আর্জি জানাই। 


আমরা এখানে দীর্ঘদিন শিক্ষা অর্জন করেছি। আমাদেরকে আপনাদের অনেক শাসন-বাড়নের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। এই শাসন সাময়িক বিরক্তিকর মনে হলেও এখন এই শেষ মুহূর্তে বুঝতে পারছি এটা আমাদের জন্য কতটা প্রয়োজন ছিলো। 


তাই আমাদের কোনো আচরণের যদি কোনো শিক্ষক/শিক্ষিকা কষ্ট পেয়ে থাকেন, বা ছোট কিংবা বড় কোনো ভুল করে থাকি তাহলে আমাদেরকে ক্ষমা করবেন। সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীদের পক্ষ থেকে আমি বিনীতভাবে ক্ষমার  প্রার্থনা  করছি। আমরা ছোট মানুষ। ইচ্ছায় অনিচ্ছায় ছোট বড় অনেক ভুল করেছি দয়া করে আমাদের ক্ষমা করে দিন। 


আমি আমাদের এই বিদায়ের লগ্নে আমাদের সকল স্যারের কাছে কৃতজ্ঞ। কারন আপনাদের দেওয়া আলোয় আজ আমি আলোকিত মানুষ।


 যার জন্য আমার এই এক জনমে আমি আপনাদের ঋণ শ্রোধ করতে পারবো না৷ আপনাদের ভালোবাসার ছায়ার নিচে যে আশ্রায় আমাকে বা আমাদের দিয়েছেন। তা কখনো ভুলতে পারবো না। আজকের এই বিদায়ে সবচেয়ে যন্ত্রণাদায়ক বিষয় হচ্ছে। আপনার আশ্রয়ের ছায়া থেকে সরে যাওয়া। 


আপনাদের কাছে আমি দূরে গেলেও  আপনাদের আর্দশ আমি নিজের মাঝে ধারণা করে। বাকী জীবন চলতে চাই। এবং চলবো। এর জন্য আপনাদের দোয়া প্রত্যাশা করি স্যার। 


৪.

জগতের এটাই তো চিরাচরিত নিয়ম, পুরাতনরা জায়গা ছেড়ে দিবে আর নতুনরা সে জায়গা গ্রহণ করবে। 


তাই বিদায়ের দায় একটাই, সেটা হলো জায়গা ছেড়ে দেওয়া। পুরাতনকে বিদায় জানিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়া। হ্যা, পেছনে কারো কারো জলে ভরা চক্ষু থাকবেই, নিজের চোখও হয়তো ছল-ছল করবে জলে, পা চলবে না সামনে, তবু যেতে হবে, চলতে হবে সম্মুখপানে । কারণ বিদায় চিরন্তন, বিদায়-ই মৌলিক। আর বিদায় সব সময় বিষাদময়। সবশেষে অশ্রুসিক্ত লোচনে আর নির্বাক কন্ঠে মৃদু মৃদু শব্দে বলে উঠা ”দেখা হবে বন্ধু হয়তো কোনো এক ক্ষণে”!


ভালো থাকুক প্রিয় শিক্ষক

ভালো থাকুক প্রিয় স্কুল। প্রিয় আঙ্গিনা। 

স্মৃতির পাতা থেকে আমাদের মুছে দিও না। 


সবাই ভালো থাকুক,

আল-বিদা....


©রিয়াজ শাওন 

সাংবাদিক ও কবি। 



বিদায় অনুষ্ঠানের বক্তব্য
বিদায় অনুষ্ঠানের বক্তব্য। ছবিঃ চাঁদপুরীয়ান

Comments